ইচ্ছে শক্তি এবং শেষে দরকার কেবল সততা ও আন্তরিকতার

107

গৌরাঙ্গ দেবনাথ অপু,
বিশিষ্ট কলামিস্ট,

সাংবাদিক যখন ত্রাণ কর্মী! সাংবাদিকের কাজ হলো কোথাও ত্রাণ বিতরণ হলে, সেটির তথ্য সংগ্রহ করে তা গণমাধ্যমে তুলে ধরা। সচরাচর সেটিই আমরা করে থাকি।
কিন্তু নবীনগরে এই চিত্রটি এবার একটু ভিন্নভাবে আমার চোখে পড়েছে।
নবীনগরে একাধিক সাংবাদিক সংগঠন থাকলেও, সাংবাদিকদের সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোথাও হতদরিদ্রদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে কিনা, আমি জানিনা?
তবে বেশ কয়েকজন সাংবাদিককে ব্যক্তি ও সমষ্ঠিগত উদ্যোগে বিভিন্ন জায়গায় ত্রাণ বিতরণ করতে এবার বেশ ভালভাবেই ফেসবুকের কল্যাণে লক্ষ্য করেছি। সেজন্য ত্রাণ বিতরণকারী সেইসব সকল সাংবাদিক বন্ধুদেরকে সশ্রদ্ধ অভিবাদন জানাচ্ছি।

ব্যক্তি কিংবা সমষ্ঠিগত উদ্যোগে নবীনগরের যেসব সাংবাদিক করোনাভাইরাসের কারণে কর্মহীন হয়ে পড়া শ্রমজীবি, দরিদ্র মানুষজনের মাধ্যমে এবার ত্রাণ বিতরণ করে এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তাদের মধ্যে স্পষ্টবাদী ও সাহসী সাংবাদিক হিসেবে সব মহলে পরিচিত আমার অত্যন্ত স্নেহভাজন অভিজিত বনিকও ছিলো। সে ত্রাণকাজে নিজেকে বেশ অ্যাক্টিভ রেখেছিলো। ‘ছিলো’ বললে হয়তো ভুল হবে, এখনও সে নিয়োজিত রয়েছে।
এইতো, গতকালও অভিজিত তার নিজ এলাকা নবীনগরের লাউর ফতেপুর গ্রামে ব্যক্তি উদ্যোগে অর্ধ শতাধিক হতদরিদ্র মানুষের মাঝে চাল ডালসহ ১০ প্রকারের খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করে এসেছে।

কিছুক্ষণ আগে ফোনে অভিজিতের সঙ্গে নবীনগরের সাম্প্রতিককালের বেশ কিছু ঘটনা নিয়ে বেশ খোলামেলা আলাপচারিতা হলো। প্রায় ৪০ মিনিট ধরে নবীনগরের সামগ্রিক বিষয় নিয়ে অভিজিতের সঙ্গে আমার অনেক কথা হলো। কথাবার্তার এক পর্যায়ে অভিজিতকে শেষের দিকে ছোট্ট করে প্রশ্ন করলাম, ‘এসব সামাজিক নানা কর্মকাণ্ড করতে এত এনার্জি এবং অর্থ কিভাবে পাও তুমি অভিজিত ?’

প্রশ্নের উত্তরে বেশ সাবলীলভাবে স্পষ্ট করেই অভিজিত জবাব দিলো,’ দাদা, যেকোন কাজ করতে প্রথমে দরকার আপনার ইচ্ছে শক্তি এবং শেষে দরকার কেবল সততা ও আন্তরিকতার। এই তিনটি উপকরণের সমন্বয় ঘটিয়ে আপনি যেকোন অসাধ্যকেও সহজেই সাধ্য করতে পারবেন।”

কিন্তু টাকা, টাকা দেবে কে?

অভিজিতের আবারও সাবলীল উত্তর,”ভালো কাজে ঈশ্বরই টাকা যোগাড় করে দেন দাদা। এই যে আমি ঢাকাস্থ লাউর ফতেপুর বন্ধন ফোরামের উদ্যোগে গত কয়েকমাসে এতগুলো প্রোগ্রাম করলাম, কই কোন সমস্যায় পড়িনিতো। ফোরামের সকল সদস্যরা অর্থসহ সবকিছুই সুন্দরভাবে ম্যানেজ করেছে। তবে এটিও সত্য, আন্তরিকতা আর সততার পাশাপাশি ভালো নেতৃত্ব থাকলে সেটি আরও সহজে করা যায় দাদা।’ তবে এলাকার কর্মবীর, মানবিক, শিক্ষানুরাগী, সমাজকর্মী কয়েকজন অগ্রজের সার্বিক সহযোগিতাও আমাকে সব কাজ করতে সব সময় শক্তি যোগায়।”

তরুণ সাংবাদিক অভিজিত শেষান্তে আমায় আরও জানালো, “যতদিন করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হবে, ততদিন পর্যন্ত আমার এলাকা লাউরের কমপক্ষে ৫০ জন হতদরিদ্র মানুষকে আমি সকলের সহযোগিতা নিয়ে মাসে ১ থেকে ২ বার করে ত্রাণ সামগ্রী দিয়ে যাবো দাদা……………..

সত্যিই, অভিজিত তোমরা পারোও ছোটভাই..।
তোমাদের মতো তরুণেরাই আমাদেরকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলে, কিভাবে নিজের কাজের পাশাপাশি সমাজের কল্যাণে সামাজিক কাজটুকুও করতে হয়…..
অথচ, আমরা নিজেরা কত বড় বড় চেয়ার, গদিতে বসে লাখ লাখ টাকার ফান্ড তৈরি করেও কেবল ইচ্ছে শক্তি, সততা আর আন্তরিকতার অভাবে শত চেষ্টা করেও একটা অভিজিত হতে পারছিনা……….!!

এগিয়ে যাও অভিজিত! কর্মবীর ও মানবিক অসংখ্য শুভ উদ্যোগী মানুষগুলোরি আশীর্বাদ যে সর্বক্ষণ রয়েছে তোমাদের সঙ্গে………………

তোমাকে আবারও অভিবাদন অভিজিত !!!

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন