নবীনগরের থানাকান্দির বর্বর ঘটনা নিয়ে এমপি বললেন এই এলাকার মানুষ চরম ‘অমানুষ’

148

আজ থেকে ১৫ দিন কিংবা এক মাস আগেও যদি পুলিশের কাছে আমার দেয়া তালিকা অনুযায়ি গ্রেপ্তার হওয়া এলাকার এই শীর্ষ ২/৩ জন ক্রিমিনালসহ দাঙ্গাবাজদের পেছনে থাকা মূল গডফাদারদের ধরা হতো, তাহলে আজকের এই কলংকজনক নারকীয় ও বিভৎস এ ঘটনাটি হয়তো ঘটতনা।

নবীনগর: ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের থানাকান্দি গ্রামে করোনা পরিস্থিতির এই জাতীয় দূর্যোগের সময়েও গ্রাম্য দলাদলি ও আধিপত্য নিয়ে রবিবার (১২ এপ্রিল) দুই পক্ষের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের সময় প্রতিপক্ষের একজনের পা কেটে হাতে নিয়ে অন্য পক্ষের লোকজনদেরকে জয়বাংলা জয়ধ্বনিতে উল্লাস ও ‘আনন্দ মিছিল’ করার নারকীয় ঘটনাটি এখন সারাদেশে টক অব দ্যা কান্ট্রি পরিণত হয়েছে।

ঘটনাটিকে ‘নবীনগরের জন্য ইতিহাসে সবচেয়ে কলংকজনক, ‘বর্বরতম’ ও ক্ষমার অযোগ্য বলে অবিহিত করলেন খোদ নবীনগর থেকে নির্বাচিত স্থানীয় সাংসদ এবাদুল করিম বুলবুল নিজেও।
তবে এ ঘটনার পর এলাকার বিবদমান ওই দুই পক্ষের একটি পক্ষ তাঁর (এমপি) কাছ থেকে সবসময় প্রশ্রয় পেতেন, এলাকাবাসীর এমন অভিযোগ অবশ্য তিনি নাকচ করে দেন। নবীনগর থেকে নির্বাচিত আওয়ামীলীগ দলীয় এই সংসদ সদস্য সরাসরি এমন অভিযোগ অস্বীকার করে জোর গলায় বলেন, ‘এগুলো যারা বলেন, এরা মূলত ক্রিমিনাল। আর আমার রাজনীতির লক্ষ্যই হলো ক্রিমিনালদেরকে শায়েস্তা করা।’

তিনি (এমপি) সোমবার দুপুরে এক মুঠোফোন স্বাক্ষাৎকার প্রদানকালে এসব কথা বলেন।
গতকাল সংঘটিত থানাকান্দির নারকীয় ওই ঘটনার জন্য গভীর দুঃখ প্রকাশ করে এমপি বুলবুল বলেন, ‘ আজ সোমবার দুপুরেও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপারকে ফোনে সুস্পষ্টভাবে আমি বলেছি, আজ থেকে ১৫ দিন কিংবা এক মাস আগেও যদি পুলিশের কাছে আমার দেয়া তালিকা অনুযায়ি গ্রেপ্তার হওয়া এলাকার এই শীর্ষ ২/৩ জন ক্রিমিনালসহ দাঙ্গাবাজদের পেছনে থাকা মূল গডফাদারদের ধরা হতো, তাহলে আজকের এই কলংকজনক নারকীয় ও বিভৎস এ ঘটনাটি হয়তো ঘটতনা।

এমপি বুলবুল উল্টো প্রশ্ন করেন, এ ঘটনার পর ২৪ ঘন্টার মধ্যে যদি এলাকার দুই গ্রুপের দুই শীর্ষ দাঙ্গাবাজ নেতা তথা গডফাদার গ্রেপ্তার হন, তাহলে পুলিশের কাছে আমার তালিকা দেয়ার একমাস পরও কেন তারা এতদিন ধরা পড়লো না?

এমপি আরও বলেন, কৃষ্ণনগর এলাকার বর্তমান চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান ও সাবেক চেয়ারম্যান মাশুকুর রহমান, এরা দুইজনই মূলত দুই পক্ষের দুই দলনেতা। তবে সাবেক চেয়ারম্যানের অবর্তমানে এলাকার কাউছার মোল্লা তার পক্ষে সেখানে নেতৃত্ব দেন। আর এই দুই গ্রুপের সঙ্গে এলাকার নিদেনপক্ষে আরও ১০/১২ জন গডফাদার সরাসরি জড়িত থেকে শুধুমাত্র ব্যক্তিস্বার্থে এলাকায় সারাবছর এসব দাঙ্গা লাগিয়ে রাখেন। তাই আমি বলবো, শুধু দুজনকে গ্রেপ্তার করলেই হবেনা, দুই গ্রুপের ওইসব ১০/১২ জন শীর্ষ গড ফাদারকেও দ্রুত গ্রেপ্তার করতে হবে। আর তাহলেই এলাকায় শান্তি ফিরে আসবে।

এদিকে বিবদমান এই দুই গ্রুপের মধ্যে বর্তমান চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ নেতা জিল্লুর রহমান আপনার কাছে সবসময় ‘প্রশ্রয়’ পেতেন, এলাকাবাসির এমন অভিযোগের বিষয়ে দেশের শীর্ষ স্থানীয় ওষুধ কোম্পানি ‘বিকন’ এর মালিক এমপি এবাদুল করিম এ অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করে বলেন,’ আমি যেহেতু এলাকার এমপি তাই অনেকে আমাকে এজন্য দায়ী করবেন, সেটিই স্বাভাবিক। কিন্তু আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই, দাঙ্গাবাজ তথা ক্রিমিনালদের নিয়ে আমি কখনও রাজনীতি করিনি এবং আমৃত্যু করবোও না। আর জঙ্গী, সন্ত্রাসীরাও আমার রাজনীতিতে কখনও আসতে পারবে না। এটি আমার ওপেন চ্যালেঞ্জ।
আমার সাফ কথা, যারা ক্রিমিনাল, দাঙ্গাবাজ, সেইসব ক্রিমিনালদের জায়গা হবে সোজা জেলখানায়।

এমপি বুলবুল বলেন,’ এলাকার শান্তির জন্য ইতিমধ্যে ধরা পড়া শীর্ষ দাঙ্গাবাজরা যেন সহসাই জামিনে বের হয়ে আসতে না পারে, সেজন্য আমি মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সব মহলে কথা বলবো। কারণ, এদেরকে সর্বোচ্চ শাস্তি পেতেই হবে।’

তবে তিনি দুঃখ করে বলেন, আমি এমপি হওয়ার পর বিগত দিনে নবীনগরের দাঙ্গাপ্রবন এলাকা বাড্ডা, ধরাভাঙ্গা, মুক্তারামপুর, নূরজাহানপুর, উরখুলিয়া, কুড়িঘর, নান্দুরা এসব এলাকার মারামারি ও ঘনঘন দাংগা এলাকাবাসির সহযোগিতায় বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছি। এসব এলাকায় এখন বেশ শান্তি বিরাজ করছে। কেবল কৃষ্ণনগর এলাকায় আমি সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছি। কারণ, এই এলাকার মানুষ চরম ‘অমানুষ’। তবে আশা করি, এবার কিছু একটা হবে।”

এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মকবুল হোসেন বলেন,’গতকালের বর্বর ওই ঘটনার পর দুই শীর্ষ দাঙ্গাবাজ জিল্লুর চেয়ারম্যান ও কাউছার মোল্লাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকী সব গডফাদারদেরও গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশের একাধিক টিম ভাগ হয়ে কাজ করছে। খুব শিগগীরই সকলকে ধরা হবে ইনশাল্লাহ।’

প্রসংগত, গত রবিবারের নারকীয় সংঘর্ষের ঘটনায় এলাকার বিবদমান দুই গ্রুপের দুই শীর্ষ গ্রাম্য নেতা জিল্লুর চেয়ারম্যান ও কাউছার মোল্লাকে পুলিশ সোমবার ভোরেই গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।’
এ বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলেও তিনি জানান।

সাংবাদিক গৌরাঙ্গ দেবনাথ অপু
নবীনগর উপজেলা

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন