ব্রাহ্মণবাড়িয়া: খাল, নদী আর হাওর এ হল বাংলাদেশের মানুষের চির চেনা রূপ। এক সময় মানুষের যানবাহন প্রধান ছিল নৌকা এবং নদীপথ। আধুনিকতার ছোঁয়ায় নদীপথের পাশাপাশি মানুষ স্থলপথ, রেলপথ, আকাশপথও জয় করেছে। গ্রাম প্রধান বাংলাদেশ হওয়ায় এখনো বাংলাদেশের অধিকাংশ গ্রামেই রয়েছে মাটির মেঠো পথ।
তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর উপজেলার সুলতানপুর ইউনিয়নের রাজকৃষ্ণপুর গ্রাম আদি নাম জিদ্দিনগর।
সুলতানপুর পুরাতন বাজার থেকে দক্ষিণে যাওয়া একমাত্র রাস্তাটিই হলো রাজকৃষ্ণপুরের রাস্তা। এ গ্রামটি এখনো আধুনিকতার ছোঁয়া পায়নি। পায়নি কোন পাকা রাস্তা। যে রাস্তাটি রয়েছে তাও বৃষ্টি হলে ৩/৪ দিন কাদা হয়ে চলার অযোগ্য হয়ে পড়ে।
গ্রামের দক্ষিণ পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ঐতিহ্যবাহী তিতাস নদী। তিতাস নদীর শাখা নদী স্থানীয় ভাষায় খালকাটা খাল নামে পরিচিত।
যদিও খালকাটা খালটি প্রশস্ত প্রায় ১০০ ফুট। ভূমি দস্যুদের কবলে পড়ে খালটি এক সময় হয়ে যায় ছোট্ট নালা হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে যার প্রশস্ত প্রায় ৮/১০ফুট। ভূমি দস্যুদের বিরুদ্ধে হাওর থেকে ভ্যাকু দিয়ে মাটি কেটে ট্রাক ভর্তি করে মাটি শহরের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রয় করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মাটি কেটে নিয়ে যাবার সময় ভারী ট্রাকের চাপে পড়ে কালভার্টটির নিচ দিয়ে মধ্যাংশ ভেঙ্গে ফাঁটল ধরে ভেঙ্গে গেছে যা স্বাভাবিক যান চলাচলেও ব্যাঘাত ঘটতে পারে। ভূমি দস্যুরা বিষয়টি টের পেয়ে মূল ভাঙা অংশ মেরামত না করেই উপর দিয়ে বালু, সিমেন্টের প্রলেপ দিয়ে উপরি অংশ মাটি দিয়ে ভরাট করে ফেলে চলে যায়।
সুলতানপুর ৪নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ সভাপতি নুরুল আমীন ভূইয়া জানান, রাজকৃষ্ণপুর গ্রামের সকলেই হিন্দু পরিবার। এ গ্রামে প্রায় দেড় হাজার লোকের যাতায়াতের একমাত্র রাস্তা এটি। আমাদের সুলতানপুর গ্রামের অধিকাংশ মানুষের জমি এ হাওরে যার কারণে আমাদের গ্রামের লোকেদেরও হাওরে যাতায়াতের রাস্তা এটি।
তিনি আরো জানান, সম্প্রতি সুলতানপুর গ্রামের হাজী মিজান তালুকদারের ছেলে ও সাবেক মেম্বার মোশারফ তালুকদারের ছোট ভাই জুয়েল তালুকদার মাটির ব্যবসা করে। হাওর থেকে মাটি কেটে ট্রাক ভর্তি করে মাটি আনার সময় কালভার্টটির উপর বেশি চাপ পড়ে এটি ভেঙ্গে যায়। আমরা বাঁধা দিলে তার গোষ্ঠীর লোকেরা এসে আমাদের উপর অত্যাচার করে। তাদের ভয়ে গ্রামে কেউ কথা বলার সাহস করে না।
সুলতানপুর ৪নং ওয়ার্ডের মেম্বার শেখ কাউছার মিয়া জানান, বর্ষার সময় পানি বাড়লে তখন খালটি ভরপুর হয়ে যায়। কালভার্টটির সামনে যেভাবে মাটি কেটে নিঃশ্বেষ করা হয়েছে ভবিষ্যতে বর্ষার সময় অতিরিক্ত চাপে রাস্তাটিও বিলীন হয়ে যাবে। আমরা তাকে বাঁধা দিলে সে আমাদের তোয়াক্কা না করে এড়িয়ে যায়। প্রশাসন ও মিডিয়া তাকে কিছু করতে পারবে না তাই আমরাও নাকি তাকে কিছুই করতে পারবো না।
তিনি আরো জানান, গত ৭/৮ মাস পূর্বে সুলতানপুর আনপুকুর থেকে অবৈধভাবে মাটি কাটার সময় উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা তাকে বাঁধা দেন এবং সতর্কও করে গেছেন।
সুলতানপুর ইউপি চেয়ারম্যান শেখ ওমর ফারুকের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে তাকে মুঠো ফোনে পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে ব্রাহ্মনবাড়িয়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পঙ্কজ বড়ুয়ার সাথে কথা বল্লে তিনি জানান, বিষয়টি আমাদের জানা নেই এবং কেউ অভিযোগ করেননি। তবে সরেজমিনে আমরা লোক পাঠিয়ে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিব।