বাঞ্ছারামপুরে অঢেল সম্পদের মালিকও চায় খাসজমি বন্দোবস্ত

200

 

বাঞ্ছারামপুর প্রতিনিধি: অঢেল সম্পদের মালিক হয়ে প্রকৃত ভূমিহীনের ব্যবহৃত জায়গা লীজ নেয়ার উদ্দেশে একের পর এক নানা কুট কৌশল ও অপচেষ্টা চালিয়ে আসছে বাঞ্ছারামপুরের মানিকপুর গ্রামের ধনাঢ্য ব্যক্তি সুভাস দাস। ভূমিহীন হতে গিয়ে অবৈধভাবে মিথ্যা ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ভূমিহীন সার্টিফিকেট হাছিলও করে ফেলে। অঢেল টাকার মালিক হওয়ায় এতে সার্বিক সহযোগিতা করছে স্থানীয় এক প্রভাবশালী নেতা। এ নিয়ে চলছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার মানিকপুর গ্রামে আলোচনা আর সমালোচনা।

বাঞ্ছারামপুর উপজেলার মানিকপুর গ্রামের বাসিন্দা মৃতঃ অনাথ চন্দ্র দাসের ছেলে গুরু চন্দ্র দাস একজন হত দরিদ্র ব্যক্তি। শুটকি বিক্রি করে এবং বর্গাচাষী হিসেবে কোনরকম সংসার চলে তার। পৈত্রিকভাবে পাওয়া এক খণ্ড জায়গা প্রায় ৭ শতক ভূমিতে পরিবার নিয়ে অতি কষ্টে জীবন যাপন করে হচ্ছে। চর কল্যাণপুর মৌজায় অবস্থিত গুরু চন্দ্র দাসের বসত ভিটা ঘেঁষা পশ্চিম পার্শ্বে ৫ শতক খাস জমি রয়েছে, তারপর নদী। সরকারি ১নং খাস খতিয়ানের অন্তর্ভূক্ত ৫ দাগের ঐ ৫ শতক খাস ভূমি গুরু চন্দ্র দাস শত বছরের উর্ধ্বকাল যাবৎ বংশ পরম্পরায় একক ও নিরবচ্ছিন্নভাবে ব্যবহার করে আসছে। গুরু চন্দ্র দাস মনে করতো এমন কেউ নেই এ জমির উপর নজড় পরবে। কিন্তু তার চিন্তা উল্টো হয়ে গেল। গরীব নয় এমন এক ব্যক্তির নজড় পড়েছে, যিনি কোটিপতি সুভাস দাস। তার আট ছেলের মধ্যে চার ছেলে ইউরোপের দেশ ইতালি থাকে, অপর এক ছেলে কাতার এবং আরো দুই ছেলের স্থানীয় বাজারে দুটি জুয়েলারী স্বর্ণেও দোকান রয়েছে এবং বাড়িতে পাঁচতলা ভবন নির্মাণ করছে। এই সুভাস দাস প্রকৃত ভূমিহীনের শতবছর ধরে ব্যবহার করা খাস জায়গাটুকু কেড়ে নেয়ার জন্য ভূমিহীন সেজে নিজ নামে লিজ নিতে ব্যর্থ হবে মনে করে পরবর্তীতে কৌসলে ধর্মের দোহাই দিয়ে মন্দিরের নামে বন্দোবস্ত পেতে লিজের আবেদন করেন। শুধু তাই নয়, গুরু চন্দ্র দাসসহ তার পরিবারকে বিভিন্নভাবে প্রাণ নাশের হুমকি ধমকিও দিয়ে আসছে। বিগত ০৬-০৩-১৬ তারিখে সুভাস দাসসহ এ গ্রামের হিন্দু স¤প্রদায়ের সকল লোকজন একত্রে মন্দিরের জন্য একই বাড়ির জনৈক অশ্বীনী কুমার দাসের নিকট থেকে দলিল নং- ১৫৩৬ এবং দলিল নং- ১৪৯৩ মূলে মোট তিন শতক ভিটি ভূমি ক্রয় করে শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ মন্দির নামকরন করেন। যেখানে একজন প্রকৃত ভূমিহীন ব্যক্তি জায়গা ও জীবিকার অভাবে পরিবার নিয়ে বেঁচে থাকতে পারছেন না, সেখানে সুভাস দাস একই বাড়িতে একটি মন্দির থাকা স্বত্তে¡ও অনাধ দাসকে হয়রানীর উদ্দেশে পুনরায় অহেতুক আরেকটি মন্দির নির্মাণের জন্য আশেপাশে বহু উন্মুক্ত জায়গা থাকা সত্তে¡ও গুরুচন্দ্র দাসের ব্যবহৃত খাস জায়গাটি স্থায়ীভাবে ভোগ দখলের উদ্দেশে মন্দির নির্মাণের নামে কর্তাব্যক্তিদের নিয়ে মরিয়া হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে গুরু চন্দ্র দাস বিগত ২৭/০৩/১৯ তারিখে এ খাস জমি বন্দোবস্ত পাওয়ার আশায় এডিসি রেভিনিউ এর নিকট আবেদন করেন। এডিসি রেভিনিউ আবেদনটি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপজেলা ভূমি অফিস, বাঞ্ছারামপুওে প্রেরণ করলেও অদ্যাবধি পর্যন্ত উক্ত আদেশ বাস্তবায়নের কোন কার্যক্রম বা অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না।

সরেজমিনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরের মানিকপুর গ্রামে সাংবাদিকরা গেলে এলাকায় শত শত মানুষ ঝড়ো হয়ে যায়। আর তখন জানা যায়, দুই বাড়ি অতিক্রম করে এবং নিজ দখলেও নেই এমন সরকারি খাস জমি বন্দোবস্ত নেয়ার পায়তারাকারী ধনাঢ্য ব্যক্তি সুভাস দাসের নানা কুট কৌশলের কথা। পাশাপাশি বাড়ি হওয়ায় সীমানা নিয়ে পূর্ব বিরোধের জেরে আক্রোশে গুরু চন্দ্র দাসের পরিবার বাড়ি থেকে যেন বেড় হতে না পারে সেই শত্রæতায় তার শত বছরের ব্যবহ্নত সরকারি খাস জমি ভূমিহীন হয়ে নিজের নামে নিতে ব্যর্থ হবে মনে করে, পরে শশ্মান তৈরির নামে, এতেও ব্যর্থ হবে মনে কওে শেষ পর্যন্ত কৌঁশলে মন্দিরের জন্য বন্দোবস্ত পেতে নানা পায়তারা করছে সুভাশ চন্দ্র দাস। এলাকার মানুষের মাঝে এ নিয়ে কৌতুহল দেখা দেয়। এ ব্যপারে একই বাড়ির ব্যক্তি জনৈক কমল দাস বলেন যে, আমাদের গ্রামের হিন্দু স¤প্রদায়ের সকল লোকজন একত্রে শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ মন্দির নামে তিন শতক জায়গা আমার পিতার নিকট থেকে ক্রয় করে রাখে। সেখানে সুভাষ দাস প্রয়োজনে ব্যতীত পুনরায় মন্দির নির্মাণের নামে খাস জায়গাটি ভোগের পায়তারা করছে। একই গ্রামের সাবেক মেম্বার বলেন, প্রায় একশ বছর ধরে গুরু চন্দ্র দাসের বংশধর এ জায়গা ব্যবহার করে আসছে। তপন দাস তার পিতার নামে আবেদনের পর বিষয়টি জানাজানি হয়। এ বিষয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম বলেন, সুভাষ দাস একজন ধূর্ত ও ধনাঢ্য ব্যক্তি। সে জায়গাটি ভোগের জন্য নানা চেষ্টা ও কৌশল চালিয়ে যাচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে গুরু চন্দ্র দাস একজন ভূমিহীন ও গরীব ব্যক্তি। খাস জায়গাটি তার বসত ভিটা সংযুক্ত এবং শত বৎসর যাবৎ সে ভোগ করে আসছে।

এ বিষয়ে বাঞ্ছারামপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার ভুমি মো. সারোয়ার সালাম বলেন, সুভাস দাস ও গুরু চন্দ্র দাস উভয় খাস জায়গাটি বন্দোবস্ত পাওয়ার জন্য আবেদন করেছে। আমরা যাছাই বাছাই করছি। প্রকৃত ভূমিহীন যে ব্যক্তি সেই জায়গা পাওয়ার অধিকার রাখে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন