ব্রাহ্মণবাড়িয়া কারাগার কর্তৃপক্ষের চলছে অবাধে আসামী বাণিজ্য

273

ব্রাহ্মণবাড়িয়া কারাগারের অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। ইতিমধ্যে জেল সুপার নূরুন্নবী ভূঁইয়া ও ডেপুটি জেলার হুমায়ুন কবিরকে বদলি করা হয়েছে। সোমবার তাদের বদলির আদেশ আসে বলে দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে। জেল সুপার নূরুন্নবী ভূঁইয়াকে মুন্সীগঞ্জ আর ডেপুটি জেলার হুমায়ুন কবিরকে বরগুনা কারাগারে বদলি করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি তদন্ত কমিটি গত এপ্রিল মাসে ব্রাহ্মণবাড়িয়া কারাগারের নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত করে। এতে কারাগারে বন্দি বেচাকেনা, সাক্ষাৎ বাণিজ্য, সিট বাণিজ্য, খাবার বাণিজ্য, চিকিৎসা বাণিজ্য, পিসি বাণিজ্য, পদায়ন বাণিজ্য, কারা অভ্যন্তরে নিষিদ্ধ মালামাল প্রবেশ এবং জামিন বাণিজ্যসহ নানা অপকর্মের এক ভয়াবহ চিত্র প্রকাশ পায়। ২৮শে এপ্রিল ৫১ পৃষ্ঠার ওই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার পর মে মাসে ২৬ কারারক্ষীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় কারা প্রশাসন। তার আগে বরখাস্ত করা হয় সর্ব প্রধান কারারক্ষী আবদুল ওয়াহেদকে।

কিন্তু কারাগারের সকল অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জেল সুপার, জেলার ও ডেপুটি জেলার জড়িত উল্লেখ করে তাদেরকে কমগুরুত্বপূর্ণ জেলা কারাগারে বদলিপূর্বক বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হলেও এতদিন তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

হিসাবরক্ষক মো. নাজিম উদ্দিন, সহকারী সার্জন মো. হুমায়ুন কবির রেজা ও ডিপ্লোমা নার্স মো. নাজিরুল ইসলামের বিরুদ্ধেও একই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের কারা-১ শাখার উপসচিব মো. মনিরুজ্জামান স্বাক্ষরিত পত্রে। ২৮শে এপ্রিল অভিযুক্ত কর্মকর্তা-ও কারারক্ষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের এই নির্দেশ মন্ত্রণালয় থেকে কারা মহাপরিদর্শকের কাছে পাঠানো হয়। এরপর শুধু ২৬ কারারক্ষীর বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। তাও আবার ২ কারারক্ষীকে এখানে রেখে দেন জেলা কারাগারের কর্মকর্তারা। সূত্র জানিয়েছে কারারক্ষী আবুল হাসান (২২৪৩৭) ও মাইন উদ্দিন মজুমদারকে (২১৮২৭) এখান থেকে ছাড়া হয়নি। তারা কারাগারে নানা বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত। সোমবার চট্টগ্রামের কারা উপ-মহাপরিদর্শক মো. ফজলুল হক কারাগার পরিদর্শন করেন। তিনি একা বিভিন্ন ওয়ার্ডে গিয়ে বন্দিদের সঙ্গে কথা বলেন। কারা ক্যান্টিন পরিদর্শন করেন। তবে তার কাছে মুখ খুলেনি কেউ। সূত্র জানিয়েছে কারা উপ-পরিদর্শক আসবেন বলে ৩ দিন আগে থেকেই বন্দিদের ভয় দেখানো হয়। বলা হয় মুখ খুললে শাস্তি দেয়া হবে। সূত্র জানিয়েছে, এতকিছুর মধ্যেও কারাগারে সচল রয়েছে এখনো নানা বাণিজ্য। আর এসব কিছু জেলার এজি মাহমুদের সম্পৃক্ততাতেই হচ্ছে। জানা যায়, এজি মাহমুদ এই কারাগারে যোগদানের পর থেকে এখানে অনিয়ম-দুর্নীতি বেড়ে যায়। সাময়িক বরখাস্তের কথা বলা হলেও তাদের বিরুদ্ধে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। গত এপ্রিলে জেল সুপার নূরুন্নবী ভূঁইয়া ৪ বছর ধরে এই কারাগারে রয়েছেন। ২০১৫ সালের ১৮ই মে এখানে যোগদান করেন তিনি।

তদন্ত প্রতিবেদনে এই কারাগারে বন্দি বেচাকেনা, সাক্ষাৎ বাণিজ্য, সিট বাণিজ্য, খাবার বাণিজ্য, চিকিৎসা বাণিজ্য, পদায়ন বাণিজ্য, কারা অভ্যন্তরে নিষিদ্ধ মালামাল প্রবেশ এবং জামিন বাণিজ্যসহ সকল অপকর্মের সঙ্গে জেল সুপার নূরুন্নবী ভূঁইয়া, জেলার এজি মাহমুদ, ডেপুটি জেলার হুমায়ুন কবির, হিসাবরক্ষক মো.  নাজিম উদ্দিন সরাসরি জড়িত বলে উল্লেখ করা হয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন